ভালবাসা দিবস উদযাপন করার বিধান?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

টিভি চ্যানেল ও ইন্টারনেটের কুপ্রভাবে আজ মুসলিম পরিবারের কতক ছেলেমেয়েরা পাশ্চাত্য কালচার গ্রহণ করা শুরু করে দিয়েছে। এটা মূলত মানসিক বিপর্যয়ের আলামত। সুতরাং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন প্রতিটি লোকের আজ এ সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরী। কেউ যাতে তাদের তথাকথিত সভ্যতার ধোঁকায় পতিত না হয়।

সাহাবি আৰু অকেদ বলেন, রসূল (সা:) খায়বার যাত্রায় মূর্তি পূজকদের একটি গাছ অতিক্রম করলেন। তাদের নিকট যে গাছটির নাম ছিল ‘জাতু আনওয়াত’। এর উপর তীর টানিয়ে রাখাত হত। এ দেখে কতক সাহাবি রসূল (সা:) কে বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমাদের জন্যও এমন একটি ‘জাতু আনওয়াত’ নির্মাণ করে দিন। রসূল (সা:) ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, ‘সুবহানাল্লাহ, এ তো মুসা (আ) এর জাতির মত কথা, তারা বলেছিল ‘আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন, তাদের প্রভুর ন্যায়।’ আমি নিশ্চিত, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে (তিরমিজি [সহীহ])

“মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণ প্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামি দৃষ্টিকোণ বিচারে এটি গর্হিত, নিন্দিত কাজ। বিশেষ করে অনুকরণীয় ‘বিষয়’ আর অনুকরণীয় ‘ব্যক্তিটি’ যদি বিধর্মী, বিজাতি। আফসোস! ক্রমশ মুসলমান ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও বিশ্বাস দুর্বল হয়ে আসছে, আর বিজাতিদের অনুকরণ ক্রমান্বয়ে বেশি বেশি আরম্ভ করছে। যার অন্যতম ১৪ই ফেব্রুয়ারি বা ভালোবাস দিবস। অথচ এ দিনটি কৃশ্চিয়ান সেন্ট/পাদ্রি ভ্যালেন্টাইনকে স্মরণীয়/অমর করে রাখার উপলক্ষ্য মাত্র। যে এ দিনটি পালন করবে, সে নিশ্চিত ইসলাম বহির্ভূত। কারণ ‘ভ্যালেনটাইন’ একজন অমুসলিম কাফের”।

ইবনে কায়্যুম (রহ). বলেন, ‘কাফেরদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো একটি কুফরি কাজ। কারো দ্বিমত নেই এতে। যেমন তাদের ধর্মীয় উৎসবাদি উপলক্ষ্যে ‘শুভেচ্ছা’ ‘Happy Christmas day’ ইত্যাদি বলাও ইসলামে হারাম। কারণ, এর মানে হচ্ছে একজন লোক ক্রুশ বা মূর্তি ইত্যাদিকে সেজদা করছে, আর আপনি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এটা একজন মদ্যপ ও হত্যাকারীকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে বেশি জঘন্য, আল্লাহর অভিসম্পাতের বড় কারণ। অনেক লোক অবচেতন ভাবেই এ সকল অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, অথচ তারা জানেও না, কত বড় অপরাধ তারা করে যাচ্ছে। শিরক আর কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, ধন্যবাদ দিচ্ছে। এভাবেই আল্লাহর গোস্বা আর শাস্তিতে নিপতিত হচ্ছে।

তুমি কি জানো- ইসলামের একটি বিধান হলো “মুসলিমদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও কাফেরদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে” নাওরাকে প্রশ্ন করলো ফারিহা। নাওরা অবাক হয়ে বলল “জানিনাতো”।

আল্লাহর নির্দেশ “হে মুমিনগণ, ইয়াহুদী ও খৃস্টানদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। যে ব্যক্তি তাদের সাথে মিশে গেল, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন” (সূরা মায়েদার-৫১ নং আয়াত)।

আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স:) কে উদ্দেশ্য করে বলছেন “আল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ্বাসী লোক যারা, তাদেরকে আপনি কখনো এমন জাতির সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যে জাতি আল্লাহ ও রাসূলের শত্রু” (সূরা মুজাদালা-২২ নং আয়াত)। আমাদের পথিকৃৎ সাহাবা, নেককার পূর্ব পুরুষদের এটি ছিল বৈশিষ্ট্য। তারা মুমিনদের সাথে সম্পর্ক করেছিল এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে বৈরিভাব/শত্রুতা পোষণ করতেন, তাদের আচার অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করতেন। এতেই আমাদের কল্যান”। দু’জনের কথোপথন চলতে থাকল ।

“তাদের সাথে সামঞ্জস্যের মারাত্মক ক্ষতির দিক হলো, এর দ্বারা তাদের কৃষ্টি-কালচার প্রচার লাভ করে, প্রাধান্য বিস্তার করে সব অনুষ্ঠানের উপর। এর দ্বারাই রাসূলের (স:) সুন্নত দূর হয়ে বিদআতের প্রসার ঘটে। অথচ নামাজে প্রতি রাকাতে আমরা পড়ি, ‘আমাদেরকে সৎ পথ দেখান, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন- তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত‘ (সূরা ফাতেহা:৬-৭)। অথচ স্বেচ্ছায় তাদের অনুকরণ করছি।”

কেউ কেউ হয়তো বলবে “আমরা তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস গ্রহণ করি না, শুধু মহব্বত-ভালোবাসা তৈরী করার নিমিত্তে এ দিনটি ব্যবহার করি” । “এটাও এক ধরনের ভ্রান্ত ধারনা। কারণ আমরা সবাই জানি- কিভাবে একজন মেয়ে একজন ছেলের সাথে একটি ফুল বিনিময়, ঘুরতে যাওয়া এমনকি ব্যভিচার-বেহায়াপনা ইত্যাদির মাধ্যমে এ দিবসটি উদযাপন করে। পবিত্র মুসলিম যুবক- যুবতীর এ ধরনের নোংরামির সাথে কখনো জড়িত হতে পারে না- কারণ জড়ানো হারাম। তুমি কি জানো- মুসলিমরা হলো ওমর ফারুক, খালিদ, মুহাম্মদ বিন কাসিম এর জাতি- যারা বিশ্ব শাসন করত; যাদের নাম শুনলে পৃথিবী থরথর করে কাপতো। মুসলিমরা হলো শ্রেষ্ঠ জাতি, যাদের কৃষ্টি-কালচার গ্রহণ করতো অ-মুসলিমরা– আর আজ….!

হে বন্ধুগণ! ঐ পাশ্চাত্যরা তাদের সমাজকে চারিত্রিক বিপর্যয় হতে রক্ষা করতে পারেনি। ….. প্রতি মিনিটে সেখানে ৬ জন ধর্ষিত হয়,…..নেই কোন পারিবারিক বন্ধন-ভালোবাসা, …. প্রতিদিন অহরহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে- কারণ সেখানে কোন শান্তি নেই। ওরা ফিলিস্তিন, ইরাক, সোমালিয়া, আফগানে হাজার হাজার মুসলিম শিশুদের হত্যা করেছে ; ড. আফিয়া, ফাতিমার মতো হাজারো পবিত্র নারীদের বন্দি করে রাতের পর রাত নির্যাতন করেছে- ভাবুনতো! কাদের কালচার গ্রহণ করছেন?

অথচ এসবের বিপরীতে মুসলিমদের রয়েছে উত্তম-পরিচ্ছন্ন আচার-অনুষ্ঠান। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী পরিজনদেরকে ভালবাসুন, উপহার দিন। তবে এইসব বিনিময় করবো অন্য যেকোন দিন? এ দিবসে নয়।

আমাদের গল্পের নাওরা অনুশোচনায় মুহ্যমান। হাত প্রসাতির করে ফুলটি নিয়ে নিল ফারিহার থেকে। অনুতপ্ত ও কৃতজ্ঞ কণ্ঠে বলল, ‘এ উপদেশটি আমার প্রয়োজন ছিল। এর দ্বারা আমি দৃষ্টি ফিরে পেয়েছি। শিখেছি এসব কালচার গ্রহণ করলে আমিও কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো এবং জাহান্নামে যেতে হবে’। এ দিবসটি মুসলিমদের জন্য নয়। বিজাতীয় দিবস পালন আর নয়।

হে আল্লাহ তুমি আমাদের জীবনে প্রকৃত ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন বৃদ্ধি কর, আমাদের ঈমানকে রক্ষা করো। আর এর মাধ্যমে অকল্পনীয় প্রশস্ত- সর্বদা ভালোবাসা-সুখে পরিপূর্ণ সমাপ্তিহীন “জান্নাত” দান করো। আমাদের সম্মান ও ব্যক্তিত্ব তুমি রক্ষা কর। আমীন!!

শাইখ উসাইমিন রহ. এর একটি অভিমত। ০৫/১১/১৪২০হি.

প্রশ্ন: শেষ জমানায় এসে ভালোবাস দিবসটি ব্যাপক প্রচার লাভ করেছে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর। এটি মূলত কৃশ্চিয়ানদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ দিনে জামা-জুতো লাল রঙ্গের পরিধান করা হয়। পরস্পর ফুল বিনিময় হয়। এ সকল ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

উত্তর: প্রথমত : একটি নতুন আবিষ্কৃত (বেদআত) একটি দিবস, ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। দ্বিতীয়ত : এ সকল আচার অনুষ্ঠান অন্তর কলুষিত করে দেয়। এ ধরনের অনুষ্ঠান উদযাপন আমাদের পথিকৃৎ পূর্বসূরিদের নীতি ও আদর্শ বিরোধী। সুতরাং এ দিন তাদের উৎসব অনুষ্ঠানের কোন কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়।